🏛️ সিন্ধু সভ্যতা: বিশ্বের এক বিস্ময়কর প্রাচীন নগরসভ্যতা 🏺
মানবসভ্যতার ইতিহাসে সিন্ধু সভ্যতা (Indus Valley Civilization) এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং সুসংগঠিত নগরসভ্যতা, যা প্রায় ২৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিকাশ লাভ করে। উন্নত নগর পরিকল্পনা, নিষ্কলুষ স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং সুদক্ষ অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য এই সভ্যতা বিশেষভাবে পরিচিত।
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে সিন্ধু সভ্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক, বিশেষত SSC, WBCS, PSC, WBP, Rail ইত্যাদি পরীক্ষায় প্রায়শই এখান থেকে প্রশ্ন আসে।
এই পোস্টে সংক্ষিপ্ত অথচ তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা করা হয়েছে, যা পরীক্ষার্থীদের দ্রুত ও সহজে সিন্ধু সভ্যতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেবে। পোস্টের শেষে দেওয়া হয়েছে ১০০+ MCQ প্রশ্ন—যা আপনাকে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে। 📚✨
সিন্ধু সভ্যতার তিনটি পর্যায়
প্রাক-হরপ্পা পর্যায় (Early Harappan Phase) - ৩৩০০ থেকে ২৬০০ BCE
- হাকরা পর্যায় এর সাথে সম্পর্কিত।
- ৩০০০ BCE-এর মধ্যে সিন্ধু লিপির প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায়।
- বাণিজ্য নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে এবং কৃষির প্রচলন দেখা যায়।
- কোট দিজি সংস্কৃতি থেকে পরিপূর্ণ হরপ্পা সভ্যতার বিকাশ ঘটে।
পরিপূর্ণ হরপ্পা পর্যায় (Mature Harappan Phase) - ২৬০০ থেকে ১৯০০ BCE
- হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো, এবং লোথাল এর মতো বড় শহর গড়ে ওঠে।
- কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থা এবং নগরায়ন দেখা যায়।
- পরিকল্পিত শহর ব্যবস্থা, নিখুঁত নিষ্কাশন ব্যবস্থা, এবং নিয়মিত ওজন ও পরিমাপ প্রচলিত ছিল।
- অর্থনীতি প্রধানত কৃষি ও বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল।
পরবর্তী হরপ্পা পর্যায় (Late Harappan Phase) - ১৯০০ থেকে ১৩০০ BCE
- ১৮০০ BCE-এর দিকে ধীরে ধীরে সভ্যতার পতন শুরু হয়।
- ১৭০০ BCE-এর মধ্যে অধিকাংশ শহর পরিত্যক্ত হয়।
- কিছু উপাদান পরবর্তী সংস্কৃতিতে অব্যাহত ছিল।
- প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য অনুযায়ী, কিছু হরপ্পীয় উপাদান ১০০০-৯০০ BCE পর্যন্ত টিকে ছিল।
কৃষি ও প্রাণিসম্পদ (Agriculture and Animal Husbandry)
- গম, যব, সরষে, মটর, তিল, চনা, ও ডাল চাষ করত।
- গুজরাট অঞ্চলে বাজরা ও ধানের ব্যবহার দেখা যায়।
- সিন্ধু সভ্যতার মানুষই প্রথম তুলা উৎপাদন শুরু করেছিল।
- চাষাবাদের জন্য বলদ ব্যবহার করা হতো এবং লাঙলচাষ সম্ভবত প্রচলিত ছিল।
- কিছু জায়গায় ক্যানালের চিহ্ন পাওয়া গেলেও পাঞ্জাব ও সিন্ধ অঞ্চলে তা পাওয়া যায়নি।
বাণিজ্য ও অর্থনীতি (Trade and Economy)
- হরপ্পানরা পাথর, ধাতু, শাঁখ ইত্যাদির বাণিজ্য করত।
- ধাতব মুদ্রার প্রচলন ছিল না, বিনিময় পদ্ধতিতে লেনদেন করা হতো।
- আরব সাগর উপকূলে নৌবাণিজ্য করত।
- আফগানিস্তানের উত্তর অংশে একটি বাণিজ্য উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।
- তারা মেসোপটেমিয়া তথা টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী এলাকার সাথে বাণিজ্য করত।
- লাজবর্ডা পাথরের বাণিজ্য হরপ্পান সমাজের শাসক শ্রেণির সামাজিক মর্যাদা বাড়াতে সহায়ক ছিল।
শিল্প ও কারুশিল্প (Crafts and Industries)
- হরপ্পানরা ব্রোঞ্জ নির্মাণে পারদর্শী ছিল।
- রাজস্থানের খেতড়ি থেকে তামা এবং আফগানিস্তান থেকে টিন সংগ্রহ করত।
- তাঁতশিল্প প্রচলিত ছিল, কারণ বেশ কিছু বস্ত্রের ছাপ পাওয়া গেছে।
- মৃৎশিল্প, সিলমোহর নির্মাণ, পুঁতি তৈরির শিল্প, ও সোনার গহনা তৈরি প্রচলিত ছিল।
- ইট নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ছিল, কারণ বড় বড় ইটের স্থাপনা পাওয়া গেছে।
- নৌকা নির্মাণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের অংশ।
সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা (Society and Administration)
- এখন পর্যন্ত পাওয়া স্বল্প সংখ্যক লিপি থেকে প্রশাসনিক কাঠামো বোঝা কঠিন।
- কোনো মন্দির পাওয়া যায়নি, তাই পুরোহিতদের শাসন ছিল না বলে মনে করা হয়।
- অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক মনে করেন, হয়তো হরপ্পা কোনো একক শাসকের অধীনে ছিল না, বরং প্রতিটি শহরের নিজস্ব শাসন ব্যবস্থা ছিল।
- অন্য কিছু গবেষক মনে করেন, হয়তো ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণি শহর পরিচালনা করত।
ধর্ম (Religion)
- নারীমূর্তি থেকে বোঝা যায়, হরপ্পানরা উর্বরতা দেবীর উপাসনা করত।
- একটি সিলমোহরে তিন শৃঙ্গবিশিষ্ট এক দেবতা দেখা যায়, যাকে পশুপতি মহাদেব বলে মনে করা হয়।
- এক শৃঙ্গবিশিষ্ট গণ্ডার বা ইউনিকর্ন ও কুঁজো ষাঁড় সম্ভবত পূজিত হতো।
- প্রচুর তাবিজ পাওয়া গেছে, যা জাদুবিদ্যার প্রচলন নির্দেশ করে।
পতনের কারণ (Decline of Indus Valley Civilization)
- আর্য আক্রমণ তত্ত্ব অনুযায়ী, ইন্দো-ইউরোপীয় আর্যরা আক্রমণ করে সভ্যতাকে ধ্বংস করেছিল।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ (Natural Causes)
- ভূমিকম্প এবং নদী পরিবর্তন সভ্যতার ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।
- অনিয়মিত বৃষ্টিপাত কৃষির ক্ষতি করেছিল।
- বন্যা কৃষি এলাকা ধ্বংস করেছিল।
- পতনটি ধীরগতিতে ঘটেছিল, হঠাৎ করে নয়।
নগর পরিকল্পনা ও স্থাপত্য (Town Planning and Architecture)
- শহরগুলি গ্রিড পদ্ধতিতে পরিকল্পিত ছিল।
- প্রতিটি শহরে উঁচু দুর্গ ছিল, যেখানে সম্ভাব্য শাসক শ্রেণির বাস ছিল।
- সাধারণ জনগণের জন্য নিচু শহর তৈরি করা হয়েছিল।
- উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল এবং প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বাথরুম ও অঙ্গন ছিল।
- কিছু শহর যেমন ধোলাভিরা ও লোথাল দুর্গবেষ্টিত ছিল।
সিন্ধু সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ
🔢 ক্রমিক নং | 🏙️ স্থান | 🌍 বর্তমান অবস্থান | ⭐ উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য |
---|---|---|---|
1 | হরপ্পা | পাঞ্জাব, পাকিস্তান | প্রথম আবিষ্কৃত স্থান, গ্রানারি, পাথরের মূর্তি |
2 | মহেঞ্জোদাড়ো | সিন্ধু, পাকিস্তান | গ্রেট বাথ, নাচের মেয়ে ব্রোঞ্জ মূর্তি, পশুপতি সীল |
3 | লোথাল | গুজরাট, ভারত | প্রাচীন বন্দরনগরী, ডকইয়ার্ড, চালের অবশিষ্টাংশ |
4 | ধোলাভিরা | গুজরাট, ভারত | উন্নত জল সংরক্ষণ ব্যবস্থা, বৃহৎ জলাধার |
5 | কালিবঙ্গান | রাজস্থান, ভারত | অগ্নিকুণ্ড, কাঠের হাল |
6 | চানহুদাড়ো | সিন্ধু, পাকিস্তান | মণি নির্মাণের কারখানা, খেলনা |
7 | সুরকোটাডা | গুজরাট, ভারত | ঘোড়ার কঙ্কাল, দুর্গ |
8 | বানাওয়ালি | হরিয়ানা, ভারত | বিভিন্ন শস্যের অবশিষ্টাংশ, মৃৎপাত্র |
9 | রূপার | পাঞ্জাব, ভারত | তামার নির্মিত বস্তু, কঙ্কাল |
10 | আলমগীরপুর | উত্তর প্রদেশ, ভারত | মৃৎপাত্র, সীলমোহর |
সিন্ধু সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ
🔢 ক্রমিক নং | 🏙️ স্থান | 🌊 নদী | 🕵️ আবিষ্কারক |
---|---|---|---|
1 | হরপ্পা | রাভি | দয়ারাম সাহনি (1921) |
2 | মহেঞ্জোদাড়ো | সিন্ধু | আর. ডি. ব্যানার্জি (1922) |
3 | লোথাল | ভোগবা | এস. আর. রাও (1954) |
4 | ধোলাভিরা | মানসর ও স্ট্রিম | জে. পি. যোশী (1967-68) |
5 | কালিবঙ্গান | ঘাঘর | বি. বি. লাল ও আমলানন্দ ঘোষ (1953) |
6 | চানহুদাড়ো | সিন্ধু | এন. গোপাল মাজুমদার (1931) |
7 | সুরকোটাডা | লুনি | জে. পি. যোশী (1972) |
8 | বানাওয়ালি | সরস্বতী | আর. এস. বিষ্ট (1973) |
9 | রূপার | সতলুজ | ই. জি. ম্যাকেয় (1953) |
10 | আলমগীরপুর | হিন্দন | ওয়াই. ডি. শর্মা (1958) |
No comments:
Post a Comment