নির্দেশ : নীচের অনুচ্ছেদটি পড়ুন এবং সর্বাপেক্ষা সঠিক উত্তরটি বেছে প্রদত্ত প্রশ্নগুলির (প্রশ্ন সংখ্যা 121 থেকে 126) উত্তর দিন
এবং বাকী প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিন:
বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি
রাজশেখর বসু
গত একশ দেড়শ বৎসরের মধ্যে এক নূতন রকম আপ্তবাক্য.সকল দেশের জনসাধারণকে অভিভূত করেছে—বিজ্ঞাপন।
অশিক্ষিত লােকে মনে করে যা ছাপার অক্ষরে আছে তা মিথ্যা হতে পারে না। বিজ্ঞাপন এখন একটি চারুকলা হয়ে উঠেছে, সুরচিত হলে নৃত্যপরা অপ্সরার মতন পরম জ্ঞানী লােককেও মুগ্ধ করতে পারে। একই বস্তু-মহিমা প্রত্যহ নানা স্থানে নানা ভাষায় নানা ভঙ্গিতে পড়তে পড়তে লােকের বিশ্বাস উৎপন্ন হয়। চতুর বিজ্ঞাপক স্পষ্ট মিথ্যা বলে না; আইন বাঁচিয়ে নিজের সুনাম রক্ষা করে মনােজ্ঞ ভাষা ও চিত্রের প্রভাবে সাধারণের চিত্ত জয় করে। যে জিনিসের কোনাে দরকার নেই অথবা যা অপদার্থ তাও লােকে অপরিহার্য মনে করে। অতি বিচক্ষণ চিকিৎসকও বিজ্ঞাপনের কবল থেকে মুক্ত হতে পারেন না, সাধারণের তাে কথাই.নেই। বিজ্ঞাপন দেখে লােকের দৃঢ় ধারণা হয়, অমুক স্নাে।
মাখলে রং ফরসা হয়, অমুক তেলে ব্রেন ঠান্ডা হয়, অমুক সুধায় নার্ভ চাঙ্গা হয়, অমুক ফাউন্টেন পেন না হলে চলবে না, অমুক কাপড়ের শার্ট বা শাড়ি না পরলে আধুনিক হওয়া.যাবে না। এক বিখ্যাত বিলাতি ব্যবসায়ী ঘােষণা করেছেন—Beware of night starvation,খবরদার, রাত্রে যেন জঠরানলে দগ্ধ হয়াে না, শােবার আগে এক কাপ আমাদের এই বিখ্যাত পথ্য পান করবে। যিনি গাণ্ডেপিণ্ডে নৈশভােজন করেছেন তিনিও ভাবেন, তাই তাে,
রাত্রে পুষ্টির অভাবে মরা ঠিক হবে না, অতএব এক কাপ.খেয়েই শােয়া ভালাে। চায়ের বিজ্ঞাপনে প্রচার করা হয়—এমন উপকারী পানীয় আর নেই, সকালে দুপুরে সন্ধ্যায়, কাজের আগে মাঝে ও পরে, শীত করলে, গরমবােধ হলে, সবাবস্থায় চা-পান হিতকর।
| বিজ্ঞাপন কেমন পরােক্ষভাবে মানুষের বিচারশক্তি নষ্ট করে তার একটি অদ্ভুত দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। বহুকাল পূর্বের কথা, তখন আমি পঞ্চম বার্ষিক শ্রেণির ছাত্র। আমার পাশের টেবিলে
একজন ষষ্ঠ বার্ষিকের ছাত্র একটা লাল রঙের তরল পদার্থ।
নিয়ে তার সঙ্গে নানা রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে পরীক্ষা করছেন। জিজ্ঞাসা করলাম, “ও কী হচ্ছে ?” উত্তর
দিলেন, “এই কেশতৈলে মারকিউরি আর লেড আছে কিনা
দেখছি।” প্রশ্ন “কেশতৈলে ওসব থাকবে কেন?'
উত্তর—“এরা বিজ্ঞাপনে লিখছে, এই কেশতৈল পারদ সীসক প্রভৃতি বিষ হইতে মুক্ত। তাই পরীক্ষা করে দেখছি কথাটা সত্য কিনা।” এই ছাত্রটি যা করছিলেন ন্যায়শাস্ত্রে তার নাম কাকান্তগবেষণ, অথাৎ কাগের টা দাঁত আছে।তাই খোঁজ করা। পরে ইনি এক সরকারি কলেজের রসায়ন-অধ্যাপক হয়েছিলেন।যেমন সন্দেশ রসগােল্লায়, তেমনি কেশতৈলে পারা বা সিসে থাকবার কিছুমাত্র কারণ নেই। বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য, ভয় দেখিয়ে খদ্দের জোগাড় করা। অজ্ঞ লােকে ভাববে, কী
সর্বনাশ, তবে তাে অন্য তেলে এইসব থাকে! দরকার কী,এই গ্যারান্টি দেওয়া নিরাপদ তেলটিই মাখা যাবে।
No comments:
Post a Comment